হালদার আতঙ্ক সাকার ফিশ

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র এবং বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী এমনিতেই অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, ইঞ্জিন বোট চলা, মা-মাছ নিধনে জাল বসানো এবং আবাসিক ও শিল্পবর্জ্য পড়াসহ নানাভাবে দূষণের কবলে আছে। কিন্তু এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাছের পোনাখাদক সাকার ফিশ। প্রসঙ্গত, সাকার ফিশের পুরো নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। মূলত এটি বিদেশি মাছ। মাছটি দেশীয় জীববৈচিত্র্য ও জলাশয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ। জানা যায়, শনিবার হালদা নদীর মোহনা থেকে মদুনাঘাট সেতু পর্যন্ত ছয়টি স্পটে নৌপুলিশ অভিযান পরিচালনা করে সাড়ে ৪ হাজার মিটার ঘেরজাল জব্দ করে। এ সময় কচুখাইন এলাকা থেকে জব্দকৃত ঘেরজালে মিলেছে মাছ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকারক সাকার ফিশ। তবে ক্ষতিকর মাছটি কেবল এখানে নয়, হালদা নদীর শাখা খাল কাটাখালীসহ অনেক খালেই আছে। কিন্তু এটি সাধারণ মাছের জন্য হুমকি হওয়ায় হালদা নদীর মতো বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত নদীর জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। হালদা নদীর ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, ‘হালদায় সাকার ফিশ পাওয়ায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ এ মাছ দ্রুত বংশবিস্তার করে জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলা, ছোট মাছ ও মাছের পোনা খেয়ে থাকে। তাই হালদায় সাকার ফিশ ছড়িয়ে পড়লে নদীর মাছ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হবে।’

 

হালদাপাড়ের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, হালদার শাখা নদী কাটাখালীতে কয়েক বছর ধরে এ মাছ ছাড়া আর কোনো মাছ দেখা যায় না। কাটাখালী থেকে সহজেই হালদায় এ মাছ যেতে পারে।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এটি বিদেশি ও অ্যাকুরিয়াম-নির্ভর মাছ। অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে জমা হওয়া শ্যাওলা নিজেই পরিষ্কার করে এটি। কিন্তু পর্যায়ক্রমে নানাভাবে এটি খাল-বিল-নদী-জলাশয়-ডোবা-ড্রেনে ছড়াচ্ছে। তবে এটি মোটেই খাওয়ার উপযোগী মাছ নয়। এর শরীরটা শক্ত, মাংসও নেই। এ মাছ যদি আমাদের জলজ প্রাণী বিচরণ ও বিকাশের উৎসস্থানগুলোতে ছড়িয়ে যায় তাহলে সেটা মৎস্য সম্পদের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।’ তিনি বলেন, মাছটির তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে- দ্রুত প্রজনন বৃদ্ধি, অক্সিজেন ছাড়াই বাঁচতে পারা এবং হালকা ও দূষিত পানিতে বাঁচা। তাই যত দূষিত পানিই হোক সে বেঁচে যাচ্ছে। এখনই উচিত সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করে মাছটি নিষিদ্ধ করা। দ্রুত নিষিদ্ধের ব্যবস্থা না নিলে এটি দেশীয় মাছের জন্য বড় আতঙ্ক হবে। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘মাছটি খাওয়ার অনুপযোগী। এর পাখনা খুব ধারালো হওয়ায় অন্য মাছকে সহজে আঘাত করে। তাই এটি যদি আমাদের প্রকৃত মৎস্য সম্পদের উৎসস্থলগুলো দখল করে নেয়, তাহলে সেটি হবে দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ।

 

তাই হালদা নদীতে মাছটির সন্ধান বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা এলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’ সূএ:  বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ ও সাংবাদিকদের পেশাগত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন

» সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে মাদারীপুরে মানববন্ধন

» রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ৩৫৫৯ মামলা

» আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে শান্তির রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান মঈন খানের

» বড় কিছু নিয়ে ফিরছেন শাকিব খান, দিলেন বার্তা

» ৭১-এর পক্ষে-বিপক্ষের রাজনীতি নতুন প্রজন্ম গ্রহণ করতে রাজি নয়: নাহিদ

» ক্রীড়া বিকেন্দ্রীকরণে যথাযথ অবকাঠামো প্রয়োজন : আসিফ মাহমুদ

» নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব

» আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না: সালাহউদ্দিন

» ‘৫ আগস্টের পর নিরপেক্ষ মানুষও বিএনপির কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে’: তারেক রহমান

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হালদার আতঙ্ক সাকার ফিশ

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র এবং বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী এমনিতেই অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, ইঞ্জিন বোট চলা, মা-মাছ নিধনে জাল বসানো এবং আবাসিক ও শিল্পবর্জ্য পড়াসহ নানাভাবে দূষণের কবলে আছে। কিন্তু এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাছের পোনাখাদক সাকার ফিশ। প্রসঙ্গত, সাকার ফিশের পুরো নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। মূলত এটি বিদেশি মাছ। মাছটি দেশীয় জীববৈচিত্র্য ও জলাশয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ। জানা যায়, শনিবার হালদা নদীর মোহনা থেকে মদুনাঘাট সেতু পর্যন্ত ছয়টি স্পটে নৌপুলিশ অভিযান পরিচালনা করে সাড়ে ৪ হাজার মিটার ঘেরজাল জব্দ করে। এ সময় কচুখাইন এলাকা থেকে জব্দকৃত ঘেরজালে মিলেছে মাছ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকারক সাকার ফিশ। তবে ক্ষতিকর মাছটি কেবল এখানে নয়, হালদা নদীর শাখা খাল কাটাখালীসহ অনেক খালেই আছে। কিন্তু এটি সাধারণ মাছের জন্য হুমকি হওয়ায় হালদা নদীর মতো বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত নদীর জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। হালদা নদীর ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, ‘হালদায় সাকার ফিশ পাওয়ায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ এ মাছ দ্রুত বংশবিস্তার করে জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলা, ছোট মাছ ও মাছের পোনা খেয়ে থাকে। তাই হালদায় সাকার ফিশ ছড়িয়ে পড়লে নদীর মাছ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হবে।’

 

হালদাপাড়ের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, হালদার শাখা নদী কাটাখালীতে কয়েক বছর ধরে এ মাছ ছাড়া আর কোনো মাছ দেখা যায় না। কাটাখালী থেকে সহজেই হালদায় এ মাছ যেতে পারে।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এটি বিদেশি ও অ্যাকুরিয়াম-নির্ভর মাছ। অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে জমা হওয়া শ্যাওলা নিজেই পরিষ্কার করে এটি। কিন্তু পর্যায়ক্রমে নানাভাবে এটি খাল-বিল-নদী-জলাশয়-ডোবা-ড্রেনে ছড়াচ্ছে। তবে এটি মোটেই খাওয়ার উপযোগী মাছ নয়। এর শরীরটা শক্ত, মাংসও নেই। এ মাছ যদি আমাদের জলজ প্রাণী বিচরণ ও বিকাশের উৎসস্থানগুলোতে ছড়িয়ে যায় তাহলে সেটা মৎস্য সম্পদের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।’ তিনি বলেন, মাছটির তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে- দ্রুত প্রজনন বৃদ্ধি, অক্সিজেন ছাড়াই বাঁচতে পারা এবং হালকা ও দূষিত পানিতে বাঁচা। তাই যত দূষিত পানিই হোক সে বেঁচে যাচ্ছে। এখনই উচিত সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করে মাছটি নিষিদ্ধ করা। দ্রুত নিষিদ্ধের ব্যবস্থা না নিলে এটি দেশীয় মাছের জন্য বড় আতঙ্ক হবে। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘মাছটি খাওয়ার অনুপযোগী। এর পাখনা খুব ধারালো হওয়ায় অন্য মাছকে সহজে আঘাত করে। তাই এটি যদি আমাদের প্রকৃত মৎস্য সম্পদের উৎসস্থলগুলো দখল করে নেয়, তাহলে সেটি হবে দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ।

 

তাই হালদা নদীতে মাছটির সন্ধান বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা এলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’ সূএ:  বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com